আশরাফুল আলম:
সৌদি আরবের খেজুর গাছ বাংলাদেশে ছড়িয়ে দিয়ে জীবনের ভাগ্য পরিবর্তন করতে চান নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের জীবন আলী। তার বিশ্বাস আল্লাহর বিশেষ সৃষ্টি খেজুর বৃক্ষ-ই তার জীবন চলার পথ সুগম ও সুন্দর করে দেবে। উপজেলার শম্ভুপুরা ইউনিয়নে কাজিরগাঁও গ্রামের মৃত আব্দুল আলী টাবু ফকিরের ছেলে জীবন আলী, আল মদিনা খেজুর বৃক্ষ নার্সারী নামে একটি নার্সারী করে সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে দিতে চান আল্লাহর বিশেষ সৃষ্টি খেজুর বৃক্ষ ।
এ গাছ থেকে সারা দেশে খেজুরের ফলন হলে আমদানি নির্ভরতা কমে আসবে বলে তিনি জানিয়েছেন। পঞ্চাষোর্ধ জীবন আলী সৌদিতে প্রবাস জীবন কাটিয়েছেন ১৫ বছর। জীবন আলী ভাগ্যের চাকা ঘুরাতে অনেক পরিশ্রম করলেও বারবারই ছিটকে পড়েছেন। প্রবাস জীবনের শেষ ৫ বছর সৌদি আরবের আল-মাসানায় একটি খেজুরের বাগানে কাজ করতেন জীবন আলী। তখন খেজুর গাছ পরিচর্যা করে পারদর্শী হয়ে উঠেন। তিনি দেশে প্রায় ৮ বছর যাবত এ খেজুর বৃক্ষ চারা রোপন করে আসছেন।
জীবন আলী জানান, প্রবাসে থাকাকালীন সংসারের ভরনপোষণ দিয়ে তেমন আয় করতে পারেননি। দেশে আসার পরে কোন উপায় খুঁজে না পেয়ে নিজের বাড়িতে একটি খেজুর গাছের নার্সারি করার সিদ্ধান্ত নেন। প্রথমে তিনি সৌদি-আরব থেকে কিছু খেজুরের বীজ এনে শুরু করেন খেজুর গাছের চারার নার্সারী। খেজুর চারা বিক্রির উপযুক্ত করতেই সময় লেগে যায় ৩-৪ বছর। দশ বছর আগে সৌদি থেকে ছুটিতে এসে কয়েকটি বীজ কাজিরগাঁও কবরস্থানে রোপণ করেন। ওই গাছে ফলন দেখে জীবন আলীর খেজুর গাছ নার্সারী করতে আগ্রহী হয়ে উঠেন। আরব দেশের খেজুর সুমিষ্ট ও মাংসালো হওয়ার কারনে এর চাহিদাও বেশি। তিনি বলেন, খেজুর একটি জান্নাতি ফল। তিনি দেশবাসী আহবান জানান এ জান্নাতি ফল খেজুর বৃক্ষ দেশের প্রতিটি বাড়ির আঙ্গিনায় রোপন করলে দেশের চাহিদা পুরণ হবে।
জীবন আলী আরো জানান, খেজুর গাছ রোপন করা যেমন সময়ের ব্যাপার তেমনি খরচও অনেক বেশী। সরকারের পক্ষ থেকে সহযোগীতা পেলে বাংলাদেশে আরব দেশের খেজুর গাছ ছড়িয়ে দিয়ে দেশের খেজুর আমদানী নির্ভরতা কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। ফলে দেশের অর্থ দেশের উন্নয়নের কাজে লাগানো যাবে।
সরেজমিনে জীবন আলীর নার্সারিতে গিয়ে দেখা যায়, আরব দেশের দেড় হাজারেরও বেশী বিভিন্ন জাতের খেজুর গাছ রয়েছে তার নার্সারিতে। গত এক বছরে প্রায় ১০টি খেজুরের চাড়া বিক্রি করেছেন তিনি। প্রতিটি চারার দুই থেকে তিন হাজার টাকায় বিক্রি করেন। আলসাফা, মরিয়ম, এখলাস, শুক্কারী, খেনআইজী, ডেকলেট নূর ,সুখখারী,হালুয়া, বারহী, আল-খুদরীসহ বিভিন্ন জাতের খেজুর চারা উৎপাদন করেন জীবন আলীর আল-মদিনা খেজুর বৃক্ষ নার্সারিতে।
জীবন আলী বলেন, তিনি উপজেলার বৃক্ষমেলায় গত ২ বছর অংশ নেন। তার এ বৃক্ষ সোনারগাঁও ছাড়া পার্শবর্তী বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন ক্রয় করে নিয়ে যান। তিনি একটি চারা বিক্রি করেন ১ হাজার টাকা থেকে ৫ হাজার টাকা করে। বর্তমানে তার নার্সারীতে প্রায় ২ হাজার চারা রোপন করা আছে। এবছর অতি সম্প্রতি বৃষ্টিতে তার প্রায় ৮ শ’ চারা নষ্ট হযে যায়। তার স্ত্রী,২ মেয়ে ও ১ ছেলে নিয়ে তার জীবন সংসার। বড় মেয়ে কায়দা
বিনতে মহুয়া এসএসসিতে জিপিএ -৫ পেয়ে বর্তমানে সোনারগাঁও কাজী ফজলুল হক উইমেন্স কলেজে প্রথম বর্ষে পড়াশুনা করছেন। আর ছেলে মেয়েরা সবাই লেখাপড়া করছে। তার জীবনের উপার্জন এ খেজুর নার্সারী থেকে। তিনি পাশাপাশি বিভিন্ন গান লিখে থাকেন। তিনি খেজুর নিয়েও গান লিখেছেন। তিনি গানে গানে বলেন, ‘জান্নাতি ফল খেজুর রোপন কর ভাই, আমরা জান্নাতি ফল খাই। ফলের বৃক্ষ রোপন করে যারা, সদগায় জারিয়া নেকী পাবে তারা, সোনা ফলায় বাংলা মাটি খেজুর বৃক্ষ ফলাই, আমরা জান্নাতি ফল খাই’। তিনি নিজেই গান লিখেন, সুরও করেন নিজে।
কাজিরগাঁও গ্রামের আহম্মদ আলী জানান, জীবন আলীর উদ্যোগটি খুবই ভালো। তার মতো নার্সারী মালিকরা যদি আরব দেশের খেজুরের চারা উৎপাদন করতো। তাহলে আমাদের দেশী খেজুর দিয়ে রমজানসহ বিভিন্ন সময়ে চাহিদা পুরন করা যেতো।
সোনারগাঁ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মনিরা আক্তার জানান, জীবন আলী উপজেলা বৃক্ষমেলায় অংশ নিয়েছিল। এখানে বেশ কিছু খেজুর চারা বিক্রিও হয়েছে। বাংলাদেশে আরব দেশের খেজুর গাছের নার্সারি নেই বললেই চলে। জীবন আলীর এ উদ্যোগ প্রশংসার যোগ্য। আমরা চেষ্টা করবো তার এ খেজুরের আবাদ যেন আরো বৃদ্ধি পায়। উপজেলা কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে তাকে যথাসাধ্য সহযোগীতা করা হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন