আবু কাউসার আহমেদ :-
পাক বাহিনীর গণহত্যায় নিহত শহিদদের স্মরণে আজ সোনারগাঁয়ের সনমান্দী বাজারের সুবর্ণ সংসদ পাঠাগার প্রাঙ্গণে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৭১ সালের ২৯ সেপ্টেম্বরের এই দিনে ভোর বেলায় পাক বাহিনী ৩০/৪০টি বড় বড় নৌকা দিয়ে সনমান্দী গ্রামটিকে তিন দিক থেকে ঘিরে ফেলে। তখন ছিল বর্ষাকাল। গুলির শব্দে গ্রামবাসীর ঘুম ভাঙ্গে। নির্বিচারে গুলি বর্ষণের ফলে নারী-পুরুষ শিশুসহ মোট ১০ জন সেদিন শহিদ এবং অর্ধশত ব্যাক্তি গুলিতে আহত হন। গ্রামটিতে পেট্রোল এবং গান পাউডার ছিটিয়ে আগুন ধরিয়ে দিলে ৪০/৪১ টি বাড়ি সম্পূর্ণরূপে ভস্মীভূত হয়। মুক্তিযোদ্ধারা পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তোলে এবং অপ্রতুল অস্ত্রশস্ত্রের কারণে শেষ পর্যন্ত পিছু হঠতে বাধ্য হয়।
১৯৭১ সালে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন সনমান্দী গ্রামে যুদ্ধকালীন ২নং সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার মেজর এটিএম হায়দারের অনুমোদনক্রমে সনমান্দী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণের জন্য ' সনমান্দী মুক্তিযোদ্ধা উপ-প্রশিক্ষণ কেন্দ্র' প্রতিষ্ঠা করা হয়। এই উপ-প্রশিক্ষণ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা সোনারগাঁয়ের চিলারবাগ, লাঙ্গলবন্দ, রানদির খাল সহ বিভিন্ন যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে পাক বাহিনীকে পর্যদুস্ত করে। রাজাকারদের মাধ্যমে অবগত হয়ে সনমান্দী গ্রামের মুক্তিযোদ্ধাদের এবং মুক্তিযোদ্ধা উপ - প্রশিক্ষণ কেন্দ্রকে চিরতরে নিশ্চিহ্ন করার উদ্দেশ্যে বর্বর পাক বাহিনী এই ঘৃণ্য হত্যাযজ্ঞ চালায়।
সনমান্দী মুক্তিযোদ্ধা উপ-প্রশিক্ষন কেন্দ্রের ক্যাম্প-ইন-চার্জ বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ সিরাজুল ইসলাম মোল্লার সভাপতিত্বে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে বক্তব্য রাখেন পরশুরাম সরকারি কলেজের ইতিহাস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাহফুজুল ইসলাম হায়দার সেলিম, বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মোস্তফা, বীর মুক্তিযোদ্ধা হাজী আবুল হোসেন, সনমান্দী ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন আনু।
এই সময়ে আরো উপস্থিত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা হাজী বেলায়েত হোসেন, সনমান্দী ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জসিমউদ্দিন, বীর মুক্তিযোদ্ধা হাজী দ্বীন মোহাম্মদ মেম্বার, সনমান্দী হাছান খান উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক ধর্মীয় শিক্ষক হাজী মোঃ নুরুল আমিন, বীর মুক্তিযোদ্ধা আ: রউফ, বীর মুক্তিযোদ্ধা ইলিয়াস, বীর মুক্তিযোদ্ধা মুজিবুর রহমান, বীর মুক্তিযোদ্ধা গোফরান এবং সনমান্দী গ্রামের অন্যান্য গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ । পরে সকল শহিদদের এবং মৃত মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে মোনাজাত করা হয়।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন