সোনারগাঁও সময়ঃ সোনারগাঁওয়ের বারদী ইউনিয়নের এলাকার নাম শান্তির বাজার। শান্তির বাজারের শান্তি কেড়ে নিয়েছে বারদী ইউনিয়নের ইউপি সদস্য হাবিবুর রহমান ওরফে হাবু ডাকাত। শান্তিরবাজার এলাকায় হাবু ডাকাতের অত্যাচারে অতিষ্ঠ ১০ গ্রামের মানুষ। তার দলে রয়েছে বিভিন্ন এলাকার প্রায় শতাধিক ডাকাত । ডাকাত সর্দার হাবুর বিরুদ্ধে সোনারগাঁও থানাসহ বিভিন্ন থানায় ডাকাতি, চুরি, মাদক, অস্ত্রসহ রয়েছে ১০টিরও অধিক মামলা । জনমনে আতঙ্ক হাবু ডাকাতের গ্ৰেপ্তারের দাবি এলাকাবাসী ।
জানা যায় , ইউপি সদস্য হাবিবুর রহমান হাবু ডাকাত উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গত ২০ বছর যাবত ডাকাতি করে আসছে। তার অত্যাচারে বারদী ইউনিয়নের পাইকপাড়া, গোলায়পাড়া, মান্দারপাড়া, মসলেন্দপুর, নাকুরিয়াহাটি, চেঙ্গাকান্দি, নুনেরটেক, আলগীরচর, দলরদী, শেখের চরের গ্রামের লোকজন অতিষ্ট। স্থানীয় মোতালেব, নূর আমিন, কবীর, সামি আক্তার, শাহাজালাল, ডালিম, নূর মোহাম্মদ, দীন ইসলাম, আশিক, ফাহিম, ফালান মিয়াসহ ১৫-২০ জনের একটি সশস্ত্র বাহিনী নিয়ে তিনি ডাকাতি কর্মকাণ্ড করে থাকেন। ডাকাত সর্দার হাবু ওই এলাকার ত্রাস সৃষ্টি করে মানুষের জমি দখল থেকে শুরু করে বিভিন্ন অপকর্ম করে আসছে। ডাকাত সর্দার হাবু ও তার ক্যাডার বাহিনীর ভয়ে এলাকায় কেউ মুখ খুলতে সাহস পায়না। এমনি কি হামলা ও নির্যাতনের শিকার ভূক্তভোগী কেউ মামলা করতেও সাহস পায় না। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান জহিরুল হকের প্রভাবে সে ওই এলাকায় অপকর্ম করে বেড়ায় বলে অভিযোগ উঠেছে ।
উপজেলার বারদী ইউনিয়নের শান্তিরবাজার, চেঙ্গাকান্দী এলাকায় ডাকাত সর্দার ও বারদী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জহিরুল হকের সমর্থিত হাবিবুর রহমান হাবু ও তার ক্যাডার বাহিনীর অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে এলাকাবাসী। করোনার প্রার্দুভাবের মধ্যেও গত ৩ মাসের ব্যবধানে এ বাহিনীর সশস্ত্র ক্যাডাররা নিরীহ ৬ ব্যক্তিসহ কমপক্ষে ১০ জনকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে আহত করেছে। ভাংচুর ও লুটপাট করেছে একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে। গত ২৮ মে চাঁদার দাবীতে শান্তিরবাজারে নজরুল ইসলামের দোকান ভাংচুর করে হাবিবুর রহমান হাবু ও তার লোকজন। হাবুর চাঁদাবাজিতে বাঁধা দেওয়া যুবক শাকিল ও উজ্জলকে পেয়ে কুপিয়ে আহত করে। আহত অবস্থায় তাদেরকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও সোনারগাঁও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে ভর্তি করা হয় ।
এছাড়াও চলতি মাসের ১২ জুলাই শান্তিরবাজার এলাকায় একটি জমি নিয়ে ডাকাত সর্দার হাবিবুর রহমান হাবু, জাফর, হোসেন, ফারুক মেম্বার, সানু মেম্বার ও সানাউল্লাহ সিন্ডিকেট আব্দুল মতিনের একটি জমি জোড়পূর্বক দখলে নিয়ে একটি বহুতল ভবন নির্মাণ কাজ শুরু করেন । ভুক্তভোগী আব্দুল মতিনের পক্ষে আওয়ামী যুবলীগ নেতা বিশিষ্ট সমাজসেবক ব্যবসায়ী এবং সোনারগাঁও ভূঁইয়া ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম কথা বলায় হাবু ডাকাতের নেতৃত্বে ১৮-২০ জনের একটি দল এলোপাথাড়িভাবে আমিনুল ইসলামকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে আহত করে। মৃত্যুর হার পাঞ্জা লড়ছেন । বর্তমানে একটি বেসরকারি হসপিটালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন । পরে তার বড় ভাই বাদী হয়ে হাবু ডাকাতকে প্রধান আসামি করে ১৮ জনের নাম উল্লেখ করে সোনারগাঁও থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয় । পরে ১৪ জুলাই হাবু ডাকাতের গ্ৰেপ্তার ও বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ করেন এলাকাবাসী । সেই মামলায় হাবু ডাকাত পলাতক রয়েছে । আর বাকী পাঁচজন জামিনে আসে এলাকায় আবারও প্রভাব বিস্তার করছে । এবং মামলা উঠিয়ে নিতে বাদীকে ও তার আত্মীয়স্বজনদের হুমকি ধামকি ও তাদের উপর চাপ প্রয়োগ করছে বলে অভিযোগ পাওয়া যায় । এরপর হাবু ডাকাতের হাত থেকে নিজেদের নিরাপত্তা চেয়ে যুবলীগ নেতা আমিনুল ইসলামের পরিবারের পক্ষ থেকে ডিসি এসপির বরাবর অভিযোগ প্রদান করা হয়েছে বলে জানাগেছে ।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, আমাদের এলাকার ইউপি সদস্য একজন ডাকাত । তার প্রধান কাজ হলো মানুষের বাড়ি ঘরে হামলা চালিয়ে ডাকাতি করে থাকেন । তার ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না । তার বাড়িতে বিপুল পরিমান অস্ত্র মজুদ রয়েছে। সে এ অস্ত্র নিয়ে এলাকা মহড়া দেয়। সব সময় এলাকাবাসী আতঙ্কে থাকে। সে এলাকার জনপ্রতিনিধি হয়েছে জোর জুলম করে মানুষকে জিম্মি করে। হাবিবুর রহমান হাবু ওই এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করে মানুষকে আতঙ্কে রেখেছেন। আমরা হাবু ডাকাতের অত্যাচার থেকে নিরহ এলাকাবাসী মুক্তি চাই । অবিলম্বে এই হাবু ডাকাতকে গ্রেফতার করে আইনের মুখোমুখি করার দাবি জানাচ্ছি ।
এছাড়াও একাধিকবার পুলিশ তাকে ডাকাতি ও গরু চুরির মামলায় গ্রেফতার করে কারাগারে প্রেরণ করেন। গত বছরের ২০ অক্টোবর ডাকাতি মামলায় বারদী ইউনিয়ন পরিষদের সামনে থেকে গ্ৰেপ্তার করে সোনারগাঁও থানা পুলিশ । পরে সেই মামলায় আসামি বের হয়ে আসেন ।
এবিষয়ে জানতে ইউপি সদস্য হাবিবুর রহমান হাবুর মুঠো ফোনে একাধিকবার ফোন করলেও মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায় ।
সোনারগাঁও থানার ওসি মনিরুজ্জামান বলেন, ইউপি সদস্য হাবিবুর রহমান হাবুর বিরুদ্ধে সোনারগাঁও থাকায় ডাকাতি, জোরপূর্বক জায়গা দখল, মারামারি , মাদকসহ একাধিক মামলা রয়েছে ।
সম্প্রতি যুবলীগ নেতা আমিনুল ইসলামকে হত্যার উদ্দেশ্যে কুপিয়ে জখম মামলায় হাবু পলাতক রয়েছে । তাকে গ্ৰেপ্তারের জন্য থানা পুলিশের পাশাপাশি ডিবি পুলিশও কাজ করছে ।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন