সোনারগাঁও সময়ঃ
ভয়ংকর পরিবেশ বিপর্যের মুখে পরেছে সোনারগাঁয়ের ঐতিহ্যবাহী মেনিখালি নদী। উপজেলা প্রশাসন থেকে মাত্র একশ গজের মধ্যে অবস্থিত এ নদীটি। নদীটি এখন এলাকাবাসীর কাছে বর্জ্যের বাগাড়ে পরিনত হয়ে পরেছে।
স্রোতশ্রেনি এ নদীতে একটি পৌরসভার তিনটি ইউনিয়নের প্রায় ২০হাজার লোক এ নদীর পানি ব্যাবহার করে। এ নদীর পানি দূষিত হওয়ার ফলে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে এ এলাকার মানুষ।
বাজারের বিভিন্ন দোকানের বর্জ্যে মেনিখালিকে দূষিত করছে। নদীর দুপাশের মানুষের বাড়ির বর্জ্য, টয়লেটের লাইন নদীর সাথে দিয়েছে।
সোনারগাঁও পৌরসভার বৃষ্টির পানি নিস্কাশনের জন্য দুটি ড্রেনের সংযোগ এসে নদীর সাথে দেওয়া হয়েছে। অধিকাংশই বিভিন্ন বাড়ির মানব বর্জ্য পৌরসভার ড্রেন হয়ে মেনিখালি নদীতে এসে পড়ে। দু'টি ড্রেন লাইনের একটি থানার পাশে অন্যটি চিতার পাশে নদীর সাথে সংযোগ দিয়েছে। ফলে পৌরসভার পানির পরিবর্তে মানব বর্জ্য নদীতে পরছে। বিভিন্ন কোম্পানির তাদের কারখানার দূষিত পানিও এসে মেনিখালি নদীর পানিকে দূষিত করছে।
মোগরাপাড়া চৌরাস্তা থেকে বৈদ্যেরবাজার পর্যন্ত তিন-চারটি বাজার নদীর পাড়ে। মোগরাপাড়া চৌরাস্তা বাজারে কম পক্ষে ২০ টি মুরগির দোকান,বৈদ্যেরবাজার পাঁচ ছয়টা, উদ্ধবগঞ্জ বাজারে পাঁচটা, এসব দোকান থেকে গড়ে ১০/১৫ টন বর্জ্য মেনিখালী নদীতে নিক্ষেপ করা হয়। এ বিষাক্ত বর্জ্য বোমায় মানব জীবন পিষ্ট। এলাকাবাসীর দাবি অচিরেই এসব বর্জ্য নদীতে ফেলা বন্ধ করতে হবে। না করলে বর্জ্যের দূষনে এসব এলাকার মানুষ মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পরবে।
ভাটিবন্দর, জিয়ানগর, ভবনাথপুর, চিলারবাগ, হাতকোপা, হাবিবপুর, কোম্পানিগঞ্জ, মোগরাপাড়া, সাহাপুর, বৈদ্যেরবাজার, সোনারগাঁও পৌরসভাসহ প্রায় ১৫/২০ গ্রামের লোক অভিযোগ করে বলন, নদীতে মুরগির পঁচা পাখনা, নারিভুরি ভাসতে থাকে, যার কারণে নদীতে গোসল করা, কাপড়চোপড় ধোয়া, রান্নার কাজে এসব পানি এখন আর ব্যবহার করা যায় না।
তারা আরও জানায়, নদীতে ইঞ্জিন চালিত নৌকার তেল নদীতে ভাসতে থাকে, বিভিন্ন কোম্পানির বর্জ্য খাল বিল দিয়ে এসে এ নদীতে পরে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের বার বার বলার পরও কার্যকরি কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে মানুষ মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পরছে। নদীর দুষিত পানি ব্যাবহারে এলাকাবাসীর মধ্যে নানাবিধ সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে।
সরজমিনে দেখা যায়, সোনারগাঁ উপজেলা পরিষদের খুব কাছে উদ্ধবগঞ্জ বাজার। এ বাজারে প্রতি দিন হাজার হাজার মানুষ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রী কেনাকাটা করছে। বাজারে বিভিন্ন দোকানের বর্জ্য ফালানো হয় মেনি খালি নদীতে। পাঁচটি মুরগির দোকানের মালিক আব্দুল আজিজ, মোঃ সোহাগ মিয়া,মোঃ রানা, মোঃ নুরুল ইসলাম, মোঃ আরাফাত হোসেন গড়ে হাজারের উপর মুরগি জবাই করে বিক্রি করেন। প্রতিটি দোকানে দিনে গড়ে ২/৩ শ মুরগি বিক্রি করা হয়। সে বিক্রিত মুরগির নারি ভুরি নিয়ে প্রায় ২/৩ টন বর্জ্য মেনিখালি নদীতে ফেলে।
এ বাজারে তিনটি মাংসের দোকান আছে। মোঃ সিরাজুল ইসলাম, মোঃ বাবুল মিয়া, মোঃ লবা মিয়া গরু জবাই করে বিষ্টা, রক্ত নদীতে ফেলে। বাজারের মাছ ব্যাবসাীরা মাছ কেটে বিক্রি করে মাছের আঁইশ, পেডাসহ ফুলকা নদীতে ফেলে। আরো বিভিন্ন দোকানের মালিকরা কাচাবাজারের নষ্ট পঁচা বাসি ময়লা আবর্জনা নদীতে ফেলে। নদীর পানিতে এসব ময়লা আর্বজনা পঁচে পানিকে দুষিত করে। মারাত্মক দূর্গন্ধ তৈরি হয়। সে দুষিত পানিতে গোসল, রান্না বান্না, জামা কাপড়, ধৌত করার ফলে পানি বাহিত নানা রোগের সৃষ্টি হচ্ছে।
বিশেষ করে হাতকোপা এলাকায় নতুন ব্রিজের কাজ করার জন্য নদীতে বালি ফেলে বাধ নির্মান করে পানি চলাচলের রাস্তা বন্ধ করা হয়। ফলে পানি আবদ্ধ হয়ে পরে নড়াচড়া করতে পারে না। এর ফলে এ ভরা মৌসুমেও পানি চলাচল বন্ধ হয়ে পরে।
উদ্ধবগঞ্জ এলাকাটি মেনিখানি নদীর মাঝামাঝি হওয়ায় এ এলাকার মানুষ সবচেয়ে বেশি দুষনের স্বীকার। মুরগির পাখনা, নারিভুরি নদীর পানিতে ভাসতে থাকে। এসব পচা আর্বজনা দেখে খেয়া পারাপারের লোকজন নাকে কাপড় দিয়ে নদী পার হয়। স্বাস্থের জন্য এসব বর্জ্য মারাত্মক ক্ষতিকর। নদীর মাছসহ জীববৈচিত্র্যের জন্য ভয়ংকর হুমকি স্বরূপ। এসব দুষন অচিরেই বন্ধ না করলে মারাত্মক পরিবেশ দূষন ও প্রান হানির আশংকা হবে বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভবনাথপুর এলাকার এক ব্যাবসায়ী বলেন, দীর্ঘ দিন ধরে এ বাজারের এ অব্যবস্থাপনা। যার কারনে নদীর পানি দূষিত হচ্ছে। আমরা প্রতিদিন নদী দিয়ে পারাপারের সময় দেখি মুরগির পাখনা নদীতে ভাসতে থাকে পানিকে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে। এ পানি দিয়ে এখন কোন কাজ করা যায় না। বাজার কমিটির সভাপতি এর কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
উদ্ধবগঞ্জ বাজার সমিতির সভাপতি মোঃ বাবুল হোসেন বলেন, আসলেই এটা পরিবেশের জন্য খারাপ অবস্থা। আমি সকল ব্যাবসায়ীদের ডেকে বলব, এক জায়গায় মুরগির বর্জ্য ফেলার ব্যাবস্থা করার জন্য।
সোনারগাঁও পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ফারুক আহমেদ তপন বলেন, বিক্ষিপ্ত ভাবে বর্জ্য ফেলা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। আমি মেয়র সাহেবের সাথে কথা বলে ডাস্টবিনের ব্যবস্থা করতেছি।
সোনারগাঁ সেনিটেরি ইন্সপেক্টর মোশাররফ হোসেন জানান, আমি ডেপুটেশনে অন্যত্র সংযুক্ত আছি। অবশ্যই যারা এসব দুষনের সাথে জড়িত তাদেরকে প্রাথমিক ভাবে সর্তক করব। না মানলে আইন অনুযায়ী ব্যাবস্থা গ্রহন করা হবে।
সোনারগাঁও নির্বাহী কর্মকর্তা সাইদুল ইসলাম বলেন, উদ্ধবগঞ্জ বাজারের এ বিচ্ছিন্ন বর্জ্য ফেলা আসলেই পরিবেশকে দূষিত করছে। বাজারে কোন ডাস্টবিন না থাকার কারনে এমন অবস্থা হচ্ছে। আমি পৌরসভার মেয়রের সাথে কথা বলে একটা ডাস্টবিন স্থাপনের ব্যাবস্থা করে দিতে চেষ্টা করব।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন