জিহাদ হক্কানী : গাইবান্ধঃ গাইবান্ধার সদর উপজেলার সাহাপাড়া ইউনিয়নের লক্ষীপুর গ্রামে জনবসতিপূর্ন এলাকায় মুরগীর খামারের দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ এলাকাবাসি। বাড়ীর মধ্যে এমন মুরগীর খামার গড়ে তোলায় ওই এলাকার বসবাসরতরা আছে চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে খামারটি পরিচালিত হলেও তাদের নেই কোনো পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র। স্থানীয়রা বারবার ফার্ম মালিকের সাথে পরিবেশ সম্মত জায়গায় ফার্ম স্থাপনের পরামর্শ দিলেও তারা তা মানছে না। বিপরীতে খামার মালিক পক্ষ থেকে দেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের হুমকি-ধামকি। এঅবস্থায় জনবসতিপূর্ণ এলাকা হতে মুরগীর খামারটি অন্যত্রে স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর এলাকাবাসির পক্ষে একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন ওই গ্রামের মৃত মোহাম্মদ আলীর ছেলে মোঃ আব্দুল আজিজ শেখ।
ভুক্তভোগী ত্রিশ জনের স্বাক্ষরিত ওই অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, অন্যত্র পর্যাপ্ত যায়গা থাকা সত্বেও কেবল প্রতিহিংসার বসবর্তী হয়েই বেশ কিছু দিন হলো কোনো রকম নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে, প্রথমে ব্রয়লার মুরগী পালন করলেও, বর্তমানে লেয়ার মুরগীর খামার স্থাপন করে বাণিজ্যিক ভাবে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন ওই এলাকার মৃত আমজাদ মন্ডলের ছেলে মোঃ সবুজ মন্ডল। ফলে খামারের মুরগী এবং এর বিষ্ঠার দুর্গন্ধে ওই এলাকায় চলাফেরা এবং বসবাস করা দূর্বিসহ হয়ে উঠেছে এলাকাবাসীর। খামারের ভিতরে এবং খামারের চারপাশে পড়ে থাকা ময়লায় মশা-মাছি বাসা করে, মশা-মাছির সাথে সাথে বিভিন্ন ধরনের পোকার সৃষ্টি করছে। দূষিত মশা-মাছি খাবারে পড়ে এবং সেই খাবার খেয়ে সব বয়সের মানুষ বিশেষ করে শিশুরা ডাইরিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়েই থাকছে । সেই সাথে একই মালিকের খামার সংলগ্ন পুকুর থাকায় ওই পুকুরে বস্তায় বেধে ব্যবহার করা হচ্ছেমাছের খাদ্য হিসেবে । এসব দুর্গন্ধের কারনে সবসময় নাকে রুমাল বা কাপড় দিয়ে থাকতে হচ্ছে এবং পথ চলতে হচ্ছে মানুষের । পঁচা দূর্গন্ধে বিষিয়ে উঠছে জনজীবন। যেকোন সময় ডাইরিয়া-কলেরার মতো মহামারী হওয়ার আশঙ্কায় দিন কাটছে এলাকার ভুক্তভোগী মানুষের। ওই এলাকার কয়েকশত মানুষ চরম স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে আছে বলেও অভিযোগে উল্লেখ করেছে।
শুধু তাইনা দূর্গন্ধের কারনে বর্তমানে ওই এলাকায় বাহিরের কোন আত্মীয়-স্বজন, এমনকি অনেক বিবাহের প্রস্তাবও প্রত্যাখান হয়ে যাচ্ছে বলেও উল্লেখ করা হয় অভিযোগে। ফলে ওই এলাকায় বিবাহ উপর্যুক্ত বয়সের মেয়ে নিয়েও বিড়ম্বনায় পরেছে লহ্মীপুর গ্রামের অভিভাবকরা।
বিষয়টি স্থানীয় ভাবে কয়েক দফায় জানানোর পরেও খামার ব্যবসায়ীর পক্ষ থেকে নেওয়া হচ্ছেনা কোন ধরনের পদক্ষেপ। বিপরীতে এলাকাবাসীকে দেওয়া হচ্ছে ভয়ভীতি ও নানা ধরনের হুমকি-ধামকি। এমনকি খামারটি অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার কথা বলায় খামারী সব সময়ে দ্বন্দ্ব ফেসাদ সৃষ্টির লক্ষ্যে নানা ধরনের উষ্কানিমুলক কথাবার্তাও বলে অভিযোগ সূত্রে জানা যায়। ফলে যে কোন সময়ে বড় ধরনের দূর্ঘটনা হওয়ার আশঙ্কাও করছে ওই এলাকার সচেতন মানুষ।
করোনার এই মহাদুর্যোগকালীন সময়ে, দূর্গন্ধ ও মশা-মাছির থেকে ছড়ানো ডাইরিয়া-কলেরার মতো মহামারীর হাত থেকে ওই এলকার পরিবেশ রক্ষা করাসহ মুরগীর খামারটি অন্যাত্রে স্থাপনের যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করা হয় ওই অভিযোগে।
জানতে চাইলে সাহাপড়া ইউনিয়নের চেয়্যারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) বলেন, বিষয়টি স্থানীয় ভাবে কয়েক দফায় শালিশের খামার মালিককে খামারটি অন্যত্র স্থাপনের কথা বলা হলেও খামারের মালিক তা মানেননি।
এবিষয়ে জানতে চাইলে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) প্রসূন কুমার চক্রবর্তী বলেন, দরখাস্ত পেয়েছি তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এব্যাপারে পরিবেশ অধিদপ্তরের রংপুর বিভাগীয় পরিচালক মিহির লাল সরদার মুঠোফোনে বলেন, আবাসিক এলাকায় এবং জনগণের সমস্যা হয় এমন স্থানে মুরগীর ফার্ম হতে পারবেনা। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন