SS TV live
SS News
wb_sunny

Breaking News

করোনা সেবায় শতভাগ সাফল্যে সোনারগাঁ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।


সোনারগাঁও সময়ঃ  বিশ্বব্যাপি মরণ ঘাতি করোনা ভাইরাসের কারণে মানুষ যখন দিশে হারা। এ রোগে আক্রান্ত মৃত ব্যক্তির আপন জনকে পাওয়া যায় না শেষ যাত্রার সময়। সেই ছোঁয়াচে ভাইরাস করোনার মরণ থাবা থেকে রক্ষা পাচ্ছে না সাধারণ মানুষসহ সেবাদানকারী ডাক্তারও। এমন পরিস্থিতিতে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডাক্তাররা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন বিরামহীনভাবে । প্রায় সব ধরনের চিকিৎসা সেবা শেষে দেয়া হয় প্রেসক্রিপশন ও সরকারি ভাবে সরবরাহকৃত বিভিন্ন ধরনের ওষুধ। 
সাধারণ মানুষের পাশে থেকে তারা দিনরাত সেবার কাজ করে যাচ্ছেন। যার কারনে প্রশংসনীয় হয়েছেন সর্বমহলে। কোন সেবা থেকেই বঞ্চিত হচ্ছে না সাধারণ মানুষ। 
প্রথমে রোগীদের ডাক্তাররা বাছাই করে পরে করোনা ভাইরাসের উপসর্গ রোগীদের নমুনা ও সংগ্রহ করছেন তারা।
জানাযায়,  গত মঙ্গলবার (৩০ জুন)পর্যন্ত সোনারগাঁ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে ১৮৯৮ জনের নমুনা সংগ্রহ করে পরিক্ষার জন্য পাঠানো হয়। পরিক্ষা শেষে ৪১৬ জনের করোনা রোগী সনাক্ত হয়। এদের মধ্যে ১৬জন করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন। এ পর্যন্ত ২৬৬ জন সুস্থ হয়েছেন। আর চিকিৎসা নিচ্ছেন ১৩৪ জন।

করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঝুঁকি রয়েছে জেনেও পেশাগত দায়িত্ব পালনে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স একমাত্র এ্যাম্বুলেন্স চালক সামসুদ্দিন মিয়া প্রতিদিন করোনা ভাইরাসের উপসর্গ রোগীদের নমুনা ও রির্পোটের জন্য যতবার প্রয়োজন ততবার ঢাকায় যাওয়া আসা করেন।  

জানা গেছে, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার পলাশ কুমার সাহা, সহকারী মেডিকেল অফিসার মোঃ হাবিলউদ্দিন, এম টি ল্যাব পি পি আই রেজওয়ান ইসলাম, প্যাথলজি বিভাগের ল্যাব টেকনোলজিস্ট মনোয়ারা বেগমসহ ৮ জন মেডিকেল অফিসার। আর ৯ জন স্বাস্থ কর্মকর্তা বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসার স্বার্থে সংযুক্ত রয়েছেন। করোনা ভাইরাসের উপসর্গ দেখা দেয়া রোগীদের নমুনা সংগ্রহের ক্ষেত্রে টেকনোলজিস্ট মনোয়ারা বেগম তার দুই সহকারী রায়হান ও হাসানকে নিয়ে চালিয়ে যাচ্ছেন তার সেবাদান।     

আরও জানা গেছে , এখানে তারা গর্ভবতী নারী, প্রসূতি মা ও শিশুসহ সব ধরনের রোগীদের সেবা প্রদান করে আসছে। সরকারি এই হাসপাতালে করা হচ্ছে  নরমাল ডেলিভারি। পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতির পরামর্শও দেন। এছাড়াও রোগ অনুযায়ী ওষুধ দেন এবং রোগীদের কাছ থেকে নেওয়া হয় না কোন টাকা পয়সা। দেশের এ দুর্যোগকালীন সময়ে সারাদেশে কর্মরত উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসারদের এভাবে সেবা দিতে অনুরোধ জানান তারা।
সোনারগাঁ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়ে জেনারেল ওয়ার্ড চিকিৎসা নিতে আসা ফারুক আহমেদ নামে এক ব্যক্তি জানান, আমরা এখানে আসার পর ভালো ভাবেই চিকিৎসা সেবা পাচ্ছি। কোন প্রকার সমস্যা হচ্ছে না। নিয়মিত খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে। 


সোনারগাঁ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ওয়ার্ড বয় মোঃ মোস্তফা ও মোঃ মহসিন মিয়া জানান, মানুষের সেবা করার ব্রত নিয়ে চাকরি নিয়েছি, জীবন মৃত্যুর মালিক আল্লাহ। করোনায় মরন থাকলে কেউ ধরে রাখতে পারবে না। যত দিন বেঁচে আছি তত দিন মানুষের সেবায় কাজ করে যাব। আমরা সরাসরি রোগীর শরীরে ধরে কাটা ছেঁড়ার কাজ করি। আমাদের মধ্যে কোন মান অভিমান নেই, সবাই আমাদের আপন জন মনে করে সেবা করছি।

সোনারগাঁ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার (এসএসিএমও) মোঃ মাহফুজুর রহমান ও মোঃ হারুন অর রশিদ জানান, আমরা জরুরী বিভাগে রোগী ভর্তি, প্রাথমিক ভাবে চিকিৎসাসহ বিভিন্ন ভাবে চিকিৎসা দিয়ে আসছি দীর্ঘ দিন ধরে। যত সমস্যাই হোক আমরা এ কাজ করে যাবই। কোন রোগি হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা ছাড়া যায়নি। যতটুকু সম্ভব সেবা দিয়ে যাচ্ছি।

প্যাথলজি বিভাগের ল্যাব টেকনোলজিস্ট মনোয়ারা বেগম বলেন, প্রথম দিকে নমুনা সংগ্রহ করতে গিয়ে ভয় পেয়েছি। কারণ টিভিতে দেখেছি পৃথিবীর অনেক দেশে করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসা দিতে গিয়ে অনেক চিকিৎসক করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। 
সে থেকে মনেও ভয় তৈরী হয়েছিল। এছাড়া আমার ৫ বছরের একটি কন্যা সন্তান রয়েছে।  কিন্তু যখন চিন্তা করলাম যুদ্ধের ময়দানে নেমে মৃত্যুকে ভয় পেলে চলবে না। ভয়কে জয় করে এগিয়ে যেতে হবে। আমরা যদি ভয় পাই তাহলে মানুষের চিকিৎসা করবে কে।

আমার উপর যে দায়িত্ব দিয়েছে। সে দায়িত্ব যেন সঠিক ভাবে পালন করতে পারি সেজন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছি। এছাড়া এ কাজে আমার টিএইচও স্যার ও আমার স্বামীও আমাকে সাহস জুগিয়েছেন। আল্লাহর উপর ভরসা ও তাদের দেয়া সাহস নিয়েই নমুনা সংগ্রহের কাজে নেমে পড়ি। নমুনা সংগ্রহের কাজে সহায়তার জন্য কর্তৃপক্ষ আমাকে সহায়তার জন্য সহকারী মোঃ রায়হান ও মোঃ হাসানকে সাথে দেন। 
যারা আমার কাজে প্রতিদিনই সহায়তা করে আসছেন। তাদের দু’জন পালা করে আমাকে সহায়তা করতেন। কাজটি যাতে বন্ধ না হয়ে যায় সেজন্য নিজের দিকে খেয়াল রেখেছি। সব সময় করোনা মুক্ত থাকতে যা করনীয় তা পালন করেছি। নমুনা সংগ্রহ শেষে সেগুলো খুব যত্ম সহকারে হাসপাতালের এ্যামুলেন্স চালক সামসু মিয়ার হাতে পৌছে দিয়েছি। যিনি গত তিনমাস ধরে নমুনাগুলো পরীক্ষাগারে পৌছে দিচ্ছেন। কাজ করতে গিয়ে শরীরে অবসাদ নেমে এলেও মনোবল অুঁটট রেখে এগিয়ে যাচ্ছি।

সোনারগাঁ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সিনিয়র স্টাফ নার্স অঞ্জলি রানী হালদার হানান, আমি এ হাসপাতালে চাকরি নিয়ে আমার দায়িত্ব নিষ্ঠার সাথে পালন করে যাচ্ছি। এ করোনা ভাইরাসের সময়ও আমাদের দায়িত্বে কোন প্রকার গাফিলতির কোন অবকাশ নেই। প্রসূতি মায়েদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায়, নরমাল ডেলিভারি, এ করোনা কালীন সময়ে নারীদের নানা প্রকার স্বাস্থ সচেতন করে তুলছি।

সোনারগাঁ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার পলাশ কুমার সাহা বলেন, আমি হাসপাতালে দায়িত্ব পালনকালে সকল ডাক্তার, নার্স, আয়া, বয়সহ সবাই নিষ্ঠা ও মনোযোগের সাথে কাজ করে যাচ্ছেন। এ করোনা কালে আমরা কয়েক হাজার রোগির সেবা করেছি। যেমন সাধারন জ্বর, ঠান্ডা জ্বরসহ বিভিন্ন উপসর্গ নিয়ে আসা রোগির সেবা করেছি। এখনও সেবা দিয়ে যাচ্ছি।

Tags

সাবসক্রাইব করুন!

সবার আগে নিউজ পেতে সাবসক্রাইব করুন!

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন